সমকাল::
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেন উভয় সংকটে পড়েছে বিএনপি। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘সুদিনে ফেরার পথে’ও নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দলটি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় প্রথম এক মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে হতাশ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে সরকারের গৃহীত বেশ কিছু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্তুষ্ট নন দলটির শীর্ষ নেতারা। গত সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন নেতারা। তবে আপাতত হতাশ হলেও চাপে রাখতে রাজপথে থাকার কৌশল নিয়েছে বিএনপি।
অবশ্য তার পরও ছাত্র-জনতার সমর্থনে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশ্যে এখনই কোনো সমালোচনা করতে চায় না দলটি। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ সম্পাদনে সরকারকে যৌক্তিক সময় দিয়ে সহযোগিতা করার নীতিগত অবস্থানে রয়েছে। এ সরকারের নেতৃত্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা ব্যক্ত করেই সমর্থন দিতে চায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপির। দলটি চায়, অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার শুধু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সংস্কারকাজ সম্পন্ন করবে। এর বাইরে সংবিধান সংশোধনসহ রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকাজ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জাতীয় সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে করার পক্ষে তারা। একই সঙ্গে প্রশাসনিক সচিব পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও রদবদলের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় দলটি। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনকে সমর্থন ও সহযোগিতাকারী কর্মকর্তারাও স্থান পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন দলটির নেতারা। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ এবং জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতাকেও সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি।
এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসের কার্যক্রম মূল্যায়ন করে রাজপথে থেকে সরকারের ওপর চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে বিএনপি। সরকারকে সমর্থনের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ছাড়াও রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে দাবি নিয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আগামী রোববার ঢাকায় সমাবেশ করবে দলটি। এ ছাড়া সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতেও নানা কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাইকমান্ড। অভ্যন্তরীণ ঐক্যের পাশাপাশি সমমনা অন্যান্য দল ও জোটের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন শীর্ষ নেতারা। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে জাতীয় সরকার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদসহ আগের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাসের কার্যক্রম মূল্যায়ন করার মতো এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু দেখছি না। আশা করি, শিগগির তাদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করলে তারপর কিছু বলা যাবে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে দলের মহাসচিব গণমাধ্যমকে অবহিত করবেন।
নাম প্রকাশ না করে বিএনপির নীতিনির্ধারক কয়েকজন নেতা সমকালকে জানান, ফ্যাসিবাদ উৎখাতে যে রাজনৈতিক শক্তিগুলো ছিল বিএনপির মিত্র, নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত হওয়ায় তাদের বেশির ভাগই এখন ঈর্ষান্বিত। এই ঈর্ষা যতটা না সচেতনভাবে তারা চর্চা করে, তার বাইরে অনেক অবচেতনভাবে তা চর্চা করছে। সে কারণে দ্রুত নির্বাচনের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। সাম্প্রতিককালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন ছাত্রনেতা, অন্তর্বর্তী সরকারের দু-একজন উপদেষ্টা এবং জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের মধ্যে একই সুর রয়েছে। অন্যদিকে, ১৫ বছরের তৃণমূল নেতাকর্মীর একটি অংশ এখনও বিএনপির কঠোর নির্দেশনার আওতায় বাইরে রয়েছে। এ দুর্বলতায় বিএনপির ঈর্ষান্বিত মিত্ররা এখন লাগাতার গণমাধ্যমে সংবাদের জোগান দিয়ে চলছেন। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক চলার পথকে ‘অপরিচিত’ করে তুলছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রোববার সাতক্ষীরায় দলীয় সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেছেন, দেশের জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হলে, তাদের সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে হলে জনগণের সরকার দরকার। জনগণের অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের ঠিকই পতন হয়েছে; কিন্তু আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য, অর্থাৎ জনগণের রাজনৈতিক অধিকার এখনও অর্জিত হয়নি।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষণ বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, জনপ্রতিনিধিরা দেশের উন্নয়নে ও মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ না পাবে, ততক্ষণ বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং করণীয় বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা সোমবার অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করেন নেতারা। সেখানে তারা বলেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকাজ শুরু হয়নি। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বৈরাচারের সহায়করা রয়ে গেছে। এ জন্য দ্রুত এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ আশা করছেন তারা।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। রাত সাড়ে ৮টায় বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা তা চলে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সক্রিয় প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সংযুক্ত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের গত এক মাসের কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে একজন উপদেষ্টার পিএসের ব্যাপারে বিএনপির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ওই পিএস আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাধিক মন্ত্রীর পিএস ছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও সেই একই ব্যক্তি এখন আবার কীভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার পিএস হলেন? ওই পদ থেকে তাঁকে দ্রুত প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকার গত এক মাসে জেলা প্রশাসক ও সচিব পর্যায়ে প্রশাসনিক যে রদবদল করেছে, তাতে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এই রদবদল সর্বত্র নিরপেক্ষ হয়নি। এখানে অনেকেই আছেন, যাদের স্বৈরাচারের সহায়ক শক্তি অথবা দোসর হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। তা ছাড়া এই প্রশাসনিক রদবদল নিয়ে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার আলোচনাও করেনি।
নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার গত এক মাসে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি; দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেটি তাদের মূল কাজ। কারণ, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সুতরাং ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। সেই সংস্কার কার্যক্রম এখনও শুরু করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি চায়, দ্রুততম সময়ে তারা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করুক এবং এ ব্যাপারে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
বৈঠকে একজন নেতা বলেন, ছাত্র সমন্বয়করা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিএনপির নেতাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বক্তব্য রাখছেন। অথচ বিএনপি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গত ১৫ বছর নির্যাতিত এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। দীর্ঘ সময় ধরে দলটি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল। দল ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী নিহতও হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ছাত্র সমন্বয়কদের যথাযথ গাইডলাইন প্রয়োজন। দু’জন সমন্বয়ক অন্তর্বর্তী সরকারেরও অংশ।
এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকা থাকা দরকার। তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় লড়াই করা বিএনপি নেতাদের নিয়ে এ ধরনের তুচ্ছতাচ্ছিল্য জনগণ মেনে নেবে না। ছাত্র সমন্বয়করা এ ধরনের বক্তব্য দিতে থাকলে মাঠ পর্যায়ে এক ধরনের ভুল বার্তা যাবে। এতে নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হবে। তখন একটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বৈঠকে ঢাকার বাইরে সফরের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে গত রোববার জেলা প্রশাসকদের কাছে যে চিঠি দেওয়া হয়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একজন নেতা বলেন, বিএনপির প্রশ্ন– কোন প্রটোকলে, কোন বিবেচনায় তাদের এ নিরাপত্তা দেওয়া হবে? কারণ, তারা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কেউ না; দায়িত্বশীল কোনো পদেও নেই।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড নিয়েও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বৈঠকে বিএনপির এক নেতা জামায়াত আমিরের ওই ঘোষণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এটা জনগণের চাওয়া বা মতামতের প্রতিফলন না। কারণ ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যাসহ বিগত দিনে অত্যাচার-নির্যাতন, গুম-খুনের জন্য জনগণ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার চায়।
সাংগঠনিক কার্যক্রম শিগগির
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর পর থেকে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে বেশি মনোযোগী দলটি। জুলাইয়ের আন্দোলনের শুরু থেকে নেতাকর্মীকে সম্পৃক্ত করা, আন্দোলন বেগবান করতে তৎপর ছিলেন দলের নেতাকর্মী। ওই আন্দোলনে দলটির অনেকে ক্ষয়ক্ষতির শিকার। দুই শতাধিক নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন এবং হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত হন। এর মধ্যে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকে। এ অবস্থায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের চেয়ে হতাহত নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়ানোকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নেতারা।
এর পাশাপাশি ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় দেশের একটি বৃহৎ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দলের নেতাকর্মীকে বন্যাকবলিত এলাকায় ব্যস্ত রাখেন দলের হাইকমান্ড। দলটির নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে দেশের চিরাচরিত রাজনীতির ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ মানুষের পাশে আরও বেশি করে দাঁড়াতে হবে। দলের আদর্শ সমুজ্জ্বল করতে জনতার কাতারে যেতে হবে।
দলের এসব কর্মযজ্ঞের কারণে সাংগঠনিক তৎপরতায় ভাটা পড়েছে। সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন কমিটির পাশাপাশি দলের অঙ্গসংগঠনকে সিন্ডিকেটমুক্ত করার উদ্যোগ থমকে রয়েছে। তবে শিগগির এসব কাজ শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ নিয়ে আলোচনাও করেন নেতারা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরালো করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা। সেখানে বিএনপির হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে, সেখানে দ্রুত নতুন কমিটি দেওয়া দরকার। এতে দল ও সংগঠন গতিশীল হবে। আবার সিন্ডিকেট বলয় থেকে বিভিন্ন কমিটি বের করতে পারলেও অনেক ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে বলে তারা মত দেন। সেখানে ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি নিয়েও নেতারা আলোচনা করেন।
সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুধু দলের মধ্যে ঐক্য নয়, বিগত দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ মাঠে থাকা দলগুলোর সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক রাখছে দলটি। এরই মধ্যে ওই সব দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক শুরু করেছে। সেখানে করণীয় নির্ধারণে সমমনা দলগুলোর মতামত নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এলে ক্ষমতার ভাগীদার করার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। বলা হয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। যেখানে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল, এমন দল ও জোটকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সুশীল, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীর জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথাও বলেছে দলটি। ২০২২ সালে যুগপৎ আন্দোলনে ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা দাবি বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করছে দলটি
পাঠকের মতামত